খতিয়ানের সত্যতা যাচাই
আপনি যদি কোন জমির খতিয়ানের বালামের আসল নাকি নকল যাচাই করতে চান অথবা কোন
খতিয়ানের তল্লাশি দিতে চান তাহলে ২০ টাকার কোর্ট ফি দিয়ে এসি ল্যান্ডের কাছে
আবেদন করতে হবে । ভূমি মন্ত্রণালয়ে আদেশমতে ১৫ দিনের মধ্যে আপনাকে তল্লাশির তথ্য
প্রদান করা হবে ।
জমির খতিয়ান কোথায় পাবেন
সি এস,এস এ, আর এস খতিয়ান প্রতিটি জেলার প্রশাসকের কার্যালয়ে পাওয়া যায় । আর জরিপ
সমাপ্ত হলে প্রাথমিক কয়েক দিন উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে পাওয়া যায় ।
খতিয়ান সংগ্রহের নিয়ম
বর্তমানে অনেক ভাবে খতিয়ান সংগ্রহ করা যায় ।
জেলা ই-সেবা কেন্দ্রঃ জমির খতিয়ান নাম্বার দাগ নাম্বার আর সাথে ২০ টাকার
কোর্ট ফি যুক্ত আবেদন পত্র সাথে ২ পাতা বাংলাদেশের অনুলিপি স্ট্যাম্প এবং প্রতি
পাতায় ২ টাকার কোর্ট ফি লাগিয়ে দিতে হয় । ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে খতিয়ান পাওয়া যায়
।
জেলা ওয়েবসাইটে অনলাইনে মাধ্যমে এই আবেদন করা যায় । বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার
আলাদা ওয়েবসাইট আছে সেখানে খতিয়ানের জন্য আবেদন করা যায় । এবং যাবতীয় ফি ডাকের
মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলে প্রেরিত ঠিকানায় খতিয়ান ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যে পাওয়া যায় ।
ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রঃ খতিয়ান নাম্বার দিয়ে আবেদন করা যায় তবে সরকারি
ফি এর সাথে উদোক্তাদের কিছু কমিশন জেলা ভেদে ৩০ থেকে ৭০ টাকা বেশি দিতে হয় ।
প্রতিটি জেলায় এর ফি নির্দিষ্ট করা আছে ।
অনলাইনে খতিয়ান দেখা
বর্তমানে ১৯৬৬ সালের পরে যে সকল আর এস খতিয়ান হয়েছে যা ফাইনালি গেজেট হয়েছে তা
অনলাইনে দেখা যায় ।
এই ঠিকানায়
গিয়ে জমির জেলা, উপজেলা, মৌজা আর খতিয়ান নাম্বার দিলে তা দেখা যায় । এবং খতিয়ানের
সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করা যায় ।
জমির খতিয়ানে কি কি বিষয় জানা প্রয়োজন
- মালিকের নাম কি
- একাধিক মালিক হলে প্রত্যেকের হিস্যা বা অংশ কত
- জমির শ্রেণী কি
- দাগে মোট জমি কতটুকু? এই খতিয়ানে কতটুকু এসেছে?
- খতিয়ানে মোট জমি কতটুকু? দাগ কতটি?
-
খতিয়ানটি কোন জরিপের খতিয়ান? সি এস, না এস এ না সিটি জরিপ না নামজারি বা
মিউটেশিন?
-
১৯৮৪ সালের আগে খতিয়ানের হিস্যা ১৬ আনার হিসাবে লিখা থাকে বা বোঝার জন্য
আমাদেরকে আনা, গন্ডা, কড়া, ক্রান্তি তিলের হিসাব জানতে হয় । ১৯৮৪ পরে হলে
দশমিকে লেখা থাবে হিস্যা বা অংশ ।
খতিয়ান তল্লাশি কোথায় দিব?
খতি সাথে তিন অফিসে থাকে ইউনিয়ন ভূমি অফিস উপজেলা ভূমি অফিস এবং জেলা রের্কড রুমে
। তবে শুধু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দেয়া হয় । তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের
আদেশমতে উপজেলা ভূমি অফিসে এসি ল্যান্ড অফিসে আবেদন করে খতিয়ান সত্য কিনা যাচাই
করা যায় । তবে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সব খতিয়ানের বই থাকে সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন
।
ডিসি অফিসে আবেদন করে খতিয়ান না পেলে
অনেক সময় রের্কড রুমে খতিয়ানের আবেদন করলে তা পাওয়া যায় না । লেখা থাকে বালাম
ছিড়া বা নষ্ট বা পাতা নাই । এখানে আপনি যেটা করতে পারেন যদি এটা নামজারি বা ভূমি
অফিসের কোন কাজের জন্য লাগে তাহলে যে পাতায় আপনাকে লিখে দিবে বালাম ছেটা সে পাতাই
ব্যবহার করতে পারেন ।
তবে অন্য কাজের দরকার হলে আপনি এসি ল্যান্ড এর কাছে সেই খতিয়ানের তল্লাশি দেবেন
বা তথ্য চাইবেন, খতিয়ানের জমির পরিমাণ মালিকের নামের সত্যতা যাচাইয়ের আবেদন করবেন
। এখানে আমাদের জেনে রাখা ভালো, খতিয়ানের অনেক কপি থাকে যেমন রেকর্ড রুমে এক কপি,
উপজেলা ভূমি অফিসে এক কপি । ইউনিয়ন তহশিল অফিসে এক কপি এবং তহশিল অফিসের ২
নাম্বার রেজিস্টারে মালিকের খতিয়ানের বিপরীতে খাজনার যাবতীয় বিবরণ লেখা থাকে ।
যাকে আমরা তলবকারি বা মালিকের বহি বলি । তবে খতিয়ান প্রদানের একমাত্র অফিস জেলা
প্রশাসকের কার্যালয় । এসি ল্যান্ড তল্লাশি রিপোর্ট দেবে মাত্র ।
খতিয়ান হারিয়ে গেলে কি করণীয়
নামজারি খতিয়ান ছাড়া অন্য জরিপের খতিয়ান হারিয়ে গেলে কিছু করা লাগে না। সেই
খতিয়ান নাম্বার দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তুলে যেকোন কাজ করা যায়
কিন্তু নামজারি খতিয়ান হারিয়ে গেলে থানায় জিডি করে এসি ল্যান্ডের কাছে আবেদন
করতে হয়।
নামজারি/খারিজের মূল খতিয়ান হারিয়ে গেলে
অনেক সময় আমাদের জমির নামজারি বা খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে যায় তখন আপনাকে
থানায় একটি জিডি করতে হবে। এবং এই জিডির কপি সহ ২০ টাকার কোর্ট ফিযুক্ত একটি
আবেদন এসি ল্যান্ড বরাবর করতে হবে।
এসি ল্যান্ড যদি সব কিছু বিবেচনা করে যদি সন্তুষ্ট হন যে খতিয়ানটি হারিয়েছে
তাহলে তিনি নতুন খতিয়ান প্রদানের আদেশ দিবেন। আদেশ পেলে আপনাকে নতুন খতিয়ানের
জন্য ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই টাকার বিপরীতে একটি রশিদ দেয়া হবে যাকে
ডিসিআর বলে।
নামজারি খতিয়ানে জমি কম হলে হলে
নামজারি খতিয়ানে ভুল হলে মিস কেস দায়ের করে এসি ল্যান্ডের কাছে খুব সহজে
প্রতিকার পাওয়া যায়, আবেদন পত্রে ২০ টাকার কোর্ট ফি লাগাতে হবে। এবং প্রয়োজনীয়
কাগজপত্র যুক্ত করে আবেদন করতে হবে।
নামজারি খতিয়ানে করণিক ভুল হলে করণীয়
নামজারি খতিয়ানের নামের ভুল বা অংশের ভুল বা যেকোন করণিক ভুল এসি ল্যান্ড
সংশোধন করতে পারেন। তাই উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ ২০ টাকার ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়।
মিস কেস/বিবিধ কেস কি?
খতিয়ানে জমি না থাকলে বা অন্য কেউ আপনার জমির নামজারি করে নিলে-
প্রথমে এসি ল্যান্ডের কাছে সাদা কাগজে আবেদন করতে হবে ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং
প্রয়োজনীয় দলিলপত্রসহ যাকে আমরা মিস কেস বা বিবিধ মামলা বলি।
এই কেসের মাধ্যমে সেই খতিয়ান বাতিলের আবেদন করতে হবে, প্রয়োজনীয় শুনানি শেষে
কাগজপত্র ঠিক থাকলে এসি ল্যান্ড সেই জমি আগের খতিয়ানে ফিরিয়ে 'দিবেন। জমি মূল
খতিয়ানে ফিরে যাবে।
তাহলে আপনার খতিয়ানে আবার সেই জমি ফিরে আসবে। আর যদি মূল খতিয়ানের মালিক থেকে
আপনি জমির মালিক হন তাহলে তখন নতুন করে সাধারণ নামজারির আবেদন করতে হবে। এইভাবে
আপনার জমি আপনার নামে নামজারি হবে। তাই ভূমি অফিসের দুই নাম্বার রেজিস্টার ভালো
করে দেখে 'নিবেন আপনার জমি আসলেই এই রেজিস্টারে আছে কিনা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন