বাংলাদেশে জমির আঞ্চলিক একক ও তাদের হিসাব — বিঘা, কানি, পাখি, কেয়ার বিস্তারিত


আসসালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - ল্যান্ড সার্ভে বিডি পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশে জমির আঞ্চলিক একক ও তাদের হিসাব — বিঘা, কানি, পাখি, কেয়ার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের জমির আঞ্চলিক একক — বিঘা, কানি, পাখি ও কেয়ার ভিত্তিক জমি পরিমাপের ভিন্নতা

জমির আঞ্চলিক একক/আঞ্চলিক নাম

সারা বাংলাদেশে জমিজমার বিভিন্ন আঞ্চলিক একক আছে। নিচের নামগুলো প্রচলিত।
আঞ্চলিক জমিরি একক
  • বিঘা
  • পাক্ষি
  • কানি
  • কেয়র বা কেয়ার

জমির একক বিঘা:

বাংলাদেশের রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকার কিছু অঞ্চলে এই বিঘার হিসাবে জমি মাপা হয়। তবে এলাকাভেদে এই বিঘায় জমির পরিমাণ ভিন্ন হয়। যেমন
  • ঠাকুরগাঁও এক বিঘা জমি সমান ৫০ শতক।
  • আবার দিনাজপুরের কোথাও ৫০ শতকে, কোথাও ৪৮ শতকে, কোথাও ৬০ শতকে বিঘা।
  • রংপুরের ৬০ শতাংশ বিঘা।
  • বগুড়ায় ২৯ শতকে বিঘা।
  • সরকারি হিসাবে ৩৩ শতকে বিঘা।

জমির একক পাখি:

ঢাকা ও ময়মনসিংহের গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় এই পাখির হিসাবে জমি মাপা হয়। এলাকাভেদে এক পাখি জায়গায় ২০ শতক থেকে ৪০ শতক হয়ে থাকে।

জমির একক কিয়ার বা কেয়র:

বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এই এককে জমি মাপা হয়। এই কেয়ার বা কিয়ার জমি এলাকাভেদে ভিন্ন হয়। এলাকাভেদে এক কেয়ার জমি ৩০ শতক থেকে ৩৩ শতক হয়ে থাকে।

জমির একক কানি:

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও বরিশালে এই কানির হিসাবে জমি মাপা হয়। এক কানি জমি এলাকাভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে কমন যে হিসাব সেটা হল-
  • ৪ করা বা কড়া = ১ গণ্ডা।
  • ২০ গণ্ডা = ১ কানি।

চট্টগ্রামের কানি:

এখানে ৪০ শতকে কানি ও ১২০ শতকে কানি দেখা যায়। ৪০ শতকে কানিকে কাচ্ছা কানি বা ছোট কানি বলে। ১২০ শতকে কানিকে পাক্কা কানি বা সাই কানি বলে।

হিসাব হল- 
  • ৪০ শতক মানে, ৪০ x ৪৩৫.৬= ১৭৪২৪ স্কয়ার ফিট।
  • ২০ গণ্ডা = ১ কানি (৪০ শতকের কানি) = ১৭৪২৪ স্কয়ার ফিট।
  • ১ গণ্ডা = ১৭৪২৪/২০=৮৭১.২ স্কয়ার ফিট
  • ৪ কড়া= ১গণ্ডা= (১ গণ্ডা = ৮৭১.২ স্কয়ার ফিট।
  • ১ কড়া = ৮৭১.২/৪=২১৭.৮ স্কয়ার ফিট।
  • ১ শতক = ২ কড়া।
  • ১ কড়া = ১/২ শতক।

কুমিল্লার কানির হিসাব:

এলাকাভেদে আমরা তিন প্রকারের কানি দেখতে পাই।
৩০ শতকে,
১২০ শতকে,
১৮০ শতককের কানি।
  • ৩০ শতকে কানি হলে ৩০ x ৪৩৫.৬=১৩০৬৮ স্কয়ার ফিট।
  • ১২০ শতকের কানি হলে ১২০ x ৪৩৫.৬-৫২২৭২ স্কয়ার ফিট।
  • ১৮০ শতকে কানি হলে ১৮০ x ৪৩৫.৬-৭৮৪০৮ স্কয়ার ফিট।
  • ৪ কড়া সমান ১ গণ্ডা, ২০ গণ্ডায় ১ কানি এই হিসাব সমান।

নোয়খালির জমির কানি:

এখানে জমির শতককে ডিসিম নামে ডাকা হয়। এখানে ১২০ ডিসিমে ১ কানি হিসাবে ধরা হয়। মানে
১২০x৪৩৫.৬-৫২২৭২স্কয়ার ফুট।
১ কানি সমান ৫২২৭২ স্কয়ার ফুট
১ গণ্ডা সমান ৫২২৭২/২০=২৬১০ ২৭২/২০=২৬১৩.৬ স্কয়ার ফিট।
১ গণ্ডা সমান ৪ করা বা ২৬১৩. ৬স্কয়ার ফুট
১ করা = ২৬১৩.৬/৪ = ৬৫৩.৪ স্কয়ার ফিট।
আমরা জানি, এক শতক ৪৩৫.৬ স্কয়ার ফিট, তাহলে এক করা সমান= ৬৫৩.৪/৪৩৫.৬= ১.৫ শতক।

ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের কানি:

এখানেও এলাকাভেদে ১২০ শতক আবার কোথাও ৪০ শতকে কানি দেখা যায়।
  • ৪ করা সমান এক গণ্ডা
  • ২০ গণ্ডা সমান ১ কানি।

বরিশালের কানি:

এখানে একটু সামান্য ভিন্ন হিসাবে কানি হিসাব করা হয়।
  • ২ শতকে এক গণ্ডা
  • ১০ গণ্ডা সমান এক জ্যেষ্ঠে
  • ৮ জ্যেষ্ঠে ১ কানি।
বাংলাদেশে জমি পরিমাপের এককগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক পার্থক্য স্পষ্ট। এক অঞ্চলের 'বিঘা' বা 'কানি' অন্য অঞ্চলের সঙ্গে মিলে না, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই জমি লেনদেন বা রেজিস্ট্রেশনের সময় নির্ভুল হিসাব নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রচলিত এককের যথাযথ জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি।
প্রয়োজনে সরকারি মাপের স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে জমি পরিমাপ করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ভুল বা আইনি জটিলতা এড়ানো যায়।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশে জমির আঞ্চলিক একক ও তাদের হিসাব — বিঘা, কানি, পাখি, কেয়ার বিস্তারিত এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url